স্বাধীনতার “সম্মিলিত প্রয়াস”
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ
আরও দেখুন
সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা
মার্চ-১৯৭১ থেকে ডিসেম্বর-১৯৭১ পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা view more...
মুক্তিযুদ্ধে মিত্র দেশের অবদান
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যসহ বন্ধু রাষ্ট্রসমূহ এবং ব্যক্তিবর্গের অবদান যুদ্ধকে বেগবান করেছে আরও দেখুন
স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছর
৫০ বছরে বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়ের রোল মডেল
আরও দেখুন
প্রযুক্তি খাতে স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিটক
সকল সরকারি স্কুল/কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকুরির আবেদনের অটোমেশনের জন্যে যুগান্তকারী আরও দেখুন
স্বাধীনতার “সম্মিলিত প্রয়াস”
স্বাধীনতার “সম্মিলিত প্রয়াস”
(Collective Effort for
Liberation)
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন
- ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মিছিল বের করে। নারী, পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষ মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করে।
- ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান।
১৯৪৮ সালে তমদ্দুন মজলিস ও রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ঢাকায় ১১ মার্চ ভাষা দিবস এবং হরতাল পালন করা হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্ররা সরকারের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে মিছিল বের করলে পুলিশ ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালালে রফিক, সালাম, জব্বার ও বরকত সহ আরও অনেকে শহিদ হয়।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার
১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের অংশগ্রহণ
১৯৫৪ সালে পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য পূর্বপাকিস্তানের সমমনা চারটি রাজনৈতিক দল পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী লীগ, কৃষক-প্রজা পার্টি, নেজামে ইসলামী ও বামপন্থী গণতন্ত্রী দল মিলে ১৯৫৩ সালের ৪ ই ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।
নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং শেরে বাংলা এ-কে-ফজলুল হকের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফন্ট সরকারের কৃষি মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের মাধ্যমে বাঙালী সর্বপ্রথম রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, মাত্র ৫৬ দিন পর পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের কারণে এই সরকার ভেঙ্গে যায়।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করছেন শেখ মুজিবুর রহমান
১৯৫৬ সালে শাসনতান্ত্রিক আন্দোলন
১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র গৃহিত হয়। প্রথম শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও শাসনতন্ত্রে বাংলার স্বার্থ রক্ষা ও বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলায় ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়।
শিক্ষা আন্দোলন-১৯৬২
পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের সময়ে গঠিত “শরীফ শিক্ষা কমিশন” বাংলা ভাষার অস্তিত্ব বিপন্ন করতে (আরবী হরফে বাংলা লিখার সুপারিশ, বাধ্যতামূলক উর্দু শিক্ষা) নানা সুপারিশ করলে বাংলার ছাত্র সমাজ তার প্রতিবাদ জানায়।
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলার জনগণের মধ্যে একটি অসম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন
১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলীয় সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য ছয়-দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
ক. শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি।
খ. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা।
গ. মুদ্রা ও অর্থ সম্পর্কিত ক্ষমতা।
ঘ. রাজস্ব, কর ও শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা।
ঙ. বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা।
চ. আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা।
ছয়-দফা ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যূত্থান
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য” নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমান-সহ বাংলার ৩৫ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করলে বাংলার জনগণ শেখ মুজিবুর রহমান-সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের মুক্তির জন্য বাংলার ছাত্রসমাজ সারাদেশ-ব্যাপী তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলে, যা “১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান” নামে পরিচিত।
১৯৭০ সালের নির্বাচন
১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ৩১৩ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন লাভ করে এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০ টি আসনের মধ্যে ২৯৮ টি আসন লাভ করার মাধ্যমে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা
৭ ই মার্চের ভাষণ
২৫ ই মার্চের গণহত্যার বিবরণ-
মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ-
স্বাধীনতার ঘোষণা- মার্কিন মিডিয়া রিপোর্ট-
মুক্তিযুদ্ধের খন্ডচিত্র-
বুদ্ধিজীবি হত্যা-
পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ-
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-
চরমপত্র-
গ্রাফিক নোভেল-১৯৭১ -
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নির্বাচিত সাহিত্য
স্বাধীনতা তুমি
শামসুর রাহমান
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
September On Jessore Road
Allen Ginsberg
Millions of babies watching the skies
Bellies swollen, with big round eyes
On Jessore Road--long bamboo huts
No place to shit but sand channel ruts
Millions of fathers in rain
Millions of mothers in pain
Millions of brothers in woe
Millions of sisters nowhere to go
One Million aunts are dying for bread
One Million uncles lamenting the dead
Grandfather millions homeless and sad
Grandmother millions silently mad
Millions of daughters walk in the mud
Millions of children wash in the flood
A Million girls vomit & groan
Millions of families hopeless alone
Millions of souls nineteenseventyone
homeless on Jessore road under grey sun
A million are dead, the million who can
Walk toward Calcutta from East Pakistan
Taxi September along Jessore Road
Oxcart skeletons drag charcoal load
past watery fields thru rain flood ruts
Dung cakes on treetrunks, plastic-roof huts
Wet processions Families walk
Stunted boys big heads don't talk
Look bony skulls & silent round eyes
Starving black angels in human disguise
Mother squats weeping & points to her sons
Standing thin legged like elderly nuns
small bodied hands to their mouths in prayer
Five months small food since they settled there
on one floor mat with small empty pot
Father lifts up his hands at their lot
Tears come to their mother's eye
Pain makes mother Maya cry
Two children together in palmroof shade
Stare at me no word is said
Rice ration, lentils one time a week
Milk powder for warweary infants meek
No vegetable money or work for the man
Rice lasts four days eat while they can
Then children starve three days in a row
and vomit their next food unless they eat slow.
On Jessore road Mother wept at my knees
Bengali tongue cried mister Please
Identity card torn up on the floor
Husband still waits at the camp office door
Baby at play I was washing the flood
Now they won't give us any more food
The pieces are here in my celluloid purse
Innocent baby play our death curse
Two policemen surrounded by thousands of boys
Crowded waiting their daily bread joys
Carry big whistles & long bamboo sticks
to whack them in line They play hungry tricks
Breaking the line and jumping in front
Into the circle sneaks one skinny runt
Two brothers dance forward on the mud stage
Teh gaurds blow their whistles & chase them in rage
Why are these infants massed in this place
Laughing in play & pushing for space
Why do they wait here so cheerful & dread
Why this is the House where they give children bread
The man in the bread door Cries & comes out
Thousands of boys and girls Take up his shout
Is it joy? is it prayer? "No more bread today"
Thousands of Children at once scream "Hooray!"
Run home to tents where elders await
Messenger children with bread from the state
No bread more today! & and no place to squat
Painful baby, sick shit he has got.
Malnutrition skulls thousands for months
Dysentery drains bowels all at once
Nurse shows disease card Enterostrep
Suspension is wanting or else chlorostrep
Refugee camps in hospital shacks
Newborn lay naked on mother's thin laps
Monkeysized week old Rheumatic babe eye
Gastoenteritis Blood Poison thousands must die
September Jessore Road rickshaw
50,000 souls in one camp I saw
Rows of bamboo huts in the flood
Open drains, & wet families waiting for food
Border trucks flooded, food cant get past,
American Angel machine please come fast!
Where is Ambassador Bunker today?
Are his Helios machinegunning children at play?
Where are the helicopters of U.S. AID?
Smuggling dope in Bangkok's green shade.
Where is America's Air Force of Light?
Bombing North Laos all day and all night?
Where are the President's Armies of Gold?
Billionaire Navies merciful Bold?
Bringing us medicine food and relief?
Napalming North Viet Nam and causing more grief?
Where are our tears? Who weeps for the pain?
Where can these families go in the rain?
Jessore Road's children close their big eyes
Where will we sleep when Our Father dies?
Whom shall we pray to for rice and for care?
Who can bring bread to this shit flood foul'd lair?
Millions of children alone in the rain!
Millions of children weeping in pain!
Ring O ye tongues of the world for their woe
Ring out ye voices for Love we don't know
Ring out ye bells of electrical pain
Ring in the conscious of America brain
How many children are we who are lost
Whose are these daughters we see turn to ghost?
What are our souls that we have lost care?
Ring out ye musics and weep if you dare--
Cries in the mud by the thatch'd house sand drain
Sleeps in huge pipes in the wet shit-field rain
waits by the pump well, Woe to the world!
whose children still starve in their mother's arms curled.
Is this what I did to myself in the past?
What shall I do Sunil Poet I asked?
Move on and leave them without any coins?
What should I care for the love of my loins?
What should we care for our cities and cars?
What shall we buy with our Food Stamps on Mars?
How many millions sit down in New York
& sup this night's table on bone & roast pork?
How many millions of beer cans are tossed
in Oceans of Mother? How much does She cost?
Cigar gasolines and asphalt car dreams
Stinking the world and dimming star beams--
Finish the war in your breast with a sigh
Come tast the tears in your own Human eye
Pity us millions of phantoms you see
Starved in Samsara on planet TV
How many millions of children die more
before our Good Mothers perceive the Great Lord?
How many good fathers pay tax to rebuild
Armed forces that boast the children they've killed?
How many souls walk through Maya in pain
How many babes in illusory pain?
How many families hollow eyed lost?
How many grandmothers turning to ghost?
How many loves who never get bread?
How many Aunts with holes in their head?
How many sisters skulls on the ground?
How many grandfathers make no more sound?
How many fathers in woe
How many sons nowhere to go?
How many daughters nothing to eat?
How many uncles with swollen sick feet?
Millions of babies in pain
Millions of mothers in rain
Millions of brothers in woe
Millions of children nowhere to go
বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা
১৯৪৭ সাল। ব্রিটিশের প্ররোচনায় উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধর্মীয় বিভাজনের সীমারেখায় ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির নেশায় মত্ত। ব্যতিক্রম ছিলেন একজন মানুষ; শেখ মুজিবুর রহমান। মুসলিম লীগের তৎকালীন প্রগতিশীল ধারার তরুণ নেতা ২৭ বছর বয়সী শেখ মুজিব দুই বাংলার বাঙালিদের নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করলে গঠন করা হয় বেঙ্গল মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটি।
তীব্র জনমতের মুখে বেঙ্গল মুসলিম ওয়ার্কিং কমিটি এক ঐতিহাসিক ফর্মুলা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে। তাতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে। জনসাধারণের ভোটে একটা গণপরিষদ হবে। সেই গণপরিষদ ঠিক করবে বাংলাদেশ হিন্দুস্থান না পাকিস্তানে যোগদান করবে, নাকি স্বাধীন থাকবে? ১৯৪৭ সালে এই ফর্মুলা নিয়ে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বাঙালি নেতা শরৎ চন্দ্র বসু দিল্লিতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও জহরলাল নেহেরুর সাথে দেখা করতে যান। শরৎ বসু কংগ্রেসের নেতাদের সাথে দেখা করতে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে এসেছিলেন। গান্ধী ও পণ্ডিত নেহেরু কোনো কিছুই না বলে শরৎ বাবুকে পাঠিয়ে দেন কংগ্রেস নেতা সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের কাছে। আর মিস্টার প্যাটেল শরৎ বাবুকে খুব কঠিন কথা বলে বিদায় দিয়েছিলেন। কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যোগসাজশে ১৯৪৭ সালে যুবক শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়। সেই স্বপ্ন মহান পুরুষ মুজিব পূরণ করেছিলেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে। মহাসংগ্রামী আর দীর্ঘ ছিল সে পথচলা।
স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনে তরুণ বাঙালি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি শেখ মুজিব গঠন করলেন ছাত্রলীগ নামের এক অপরাজেয় ছাত্রসংগঠন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ। কারাগারে বন্দী ২৯ বছরের শেখ মুজিবকে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর যত সময় গেছে, শেখ মুজিব হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের প্রাণ। ভাষা আন্দোলনের সুকঠিন সময়ে কারাগারে বন্দী শেখ মুজিবই ছিলেন নেতা-কর্মীদের প্রাণপুরুষ।
১৯৫৩ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমানকে আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৫৫ সালে সংগঠন থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয় এবং শেখ মুজিবকে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ-এইড দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করলেও বাঙালি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৭ সালে মন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেন শেখ মুজিব।
ভবিষ্যতের স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে শেখ মুজিব উদ্যোগী হয়ে সমমনা ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠন করলেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামের গোপন সংগঠন। প্রতি মহকুমায় এবং থানায় নিউক্লিয়াস গঠন করেন। একই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের জাতীয় সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটিতে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন। প্রস্তাবিত ৬ দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এ বছরের ১ মার্চ শেখ মুজিবকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ১৯৬৮ সালের পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবকে ১ নম্বর আসামী করে দায়ের করে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’। সাথে আসামী করা হয় ৩৫ জন সামরিক ও সিএসপি কর্মকর্তাকে। পুরো দেশ জুড়ে তীব্র গণআন্দোলন শুরু হয়। অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জনগণের অব্যাহত চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার শেখ মুজিবসহ সকল আসামীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে প্রায় ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে জয় বাংলা স্লোগানে শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
৫ ডিসেম্বর তারিখে আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর পূর্ববাংলার আনুষ্ঠানিক নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। ১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে পুনরায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার আগে বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিলেন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে আওয়ামী লীগ। ১৭ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু তার দলের নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে ‘নৌকা’ প্রতীক পছন্দ করেন। ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ১৯৭১ সালের ৩ রা জানুয়ারি রেসকোর্সের জনসভায় বঙ্গবন্ধু ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা এবং জনগণের প্রতি অনুগত থাকার শপথ গ্রহণ করেন। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার মালিক হওয়ার কথা বাংলাদেশের জনগণের। কিন্তু পাকিস্তানের অহংকারী ক্ষমতাসীনদের মাথায় ছিল অন্য চিন্তা। পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনার নাম করে ঢাকায় আসেন। তিন দিন বৈঠক চলার পর আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়। ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে ভুট্টোর দাবির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘ভুট্টো সাহেবের দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।ক্ষমতার মালিক এখন পূর্ব বাংলার জনগণ”।
১ মার্চ ইয়াহিয়া খান অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিতের ঘোষণা দিলে বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ কার্যকরী পরিষদের জরুরী বৈঠকে ৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল আহবান করা হয়। সংবাদ পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ মুজিব তিন মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘৭ তারিখের মধ্যে সরকারি মনোভাব পরিবর্তন না হইলে রেসকোর্সে আমি আমার ভাষণ দিয়া দিব।’
৭ মার্চের আগেও নানা ভাষণে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের জন্য আলাদা রাষ্ট্র কায়েমের কথা বলেছেন। ৭ মার্চ সারাদেশে টানটান উত্তেজনা। দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে কখন তাদের নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেও ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের ‘স্বাধীনতা ও মুক্তি’ অর্জনের স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিলেন।
১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ৭ মার্চেই স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেদিন পরিষ্কার বলা হয়েছিল, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’
৭ মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক কৌশলে বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই মূলত পূর্ব বাংলায় বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। সাত মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়েই ঐতিহাসিক ৬ দফা মূলত স্বাধীনতার এক দফায় রূপান্তরিত হয়। অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা, টেলিভিশন, বেতারসহ সমস্ত দফতর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে। পাকিস্তানীরা বুঝে যায়, পূর্ব পাকিস্তান তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। বাঙালির নাম ও নিশানা মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে গোপনে সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করে ইয়াহিয়া সরকার। বাঙালি অফিসারদেরকে কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়ে এসে পাকিস্তানী অফিসারদেরকে গুরুত্বপূর্ণ সব পদে বসানো হয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসতে থাকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সৈন্য।
ততদিনে ইতিহাসের বৃহত্তম আত্মত্যাগ করার জন্য বাঙ্গালি জাতিকে প্রস্তুত করে ফেলেছেন বঙ্গবন্ধু। ২৩ মার্চ ভোরে পাকিস্তান দিবসে বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে তার বাসভবনে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে দেন। এটা ছিল সেই পতাকা যা বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের জুন মাসে পল্টন ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে জয় বাংলা বাহিনীর হাতে গচ্ছিত রেখেছিলেন। ২৩ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় ‘জয় বাংলা’ বাহিনীর কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজ শেষে বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হাতে গার্ড অব অনার প্রদানকারী দলের সালাম গ্রহণ করেন। এদিকে ইয়াহিয়া খান আর বঙ্গবন্ধুর মধ্যে কয়েক দফা আলোচনাও হয়। বঙ্গবন্ধু নিজে থেকে আলোচনা ভেঙে দেন নি। কারণ, তিনি বল ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের কোর্টে।
২৫ মার্চ রাত ৮ টায় ইয়াহিয়া খান গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। যাওয়ার আগে নির্দেশ দিয়ে যান গণহত্যা শুরু করার। রাত সাড়ে এগারটায় পাকিস্তানী সেনারা ঢাকাবাসীর উপর বর্বর হামলা শুরু করে। ওদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সেনা হামলা শুরুর প্রায় সাথে সাথেই স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইংরেজিতে লেখা এ ঘোষণাটি ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ দলিলপত্র’-৩য় খণ্ডের প্রথম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা আছে।
ওয়্যারলেস, টেলিফোন ও টেলিগ্রাম দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করা
হয়।
স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু আরেকটি বার্তা দেশবাসীর
উদ্দেশ্যে
প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশে বিশেষ
ব্যবস্থায়
পাঠানো হয়। সর্বস্তরের জনগণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর
সেনানিবাসে বাঙালি সৈন্য ও অফিসাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।পাকিস্তান
সেনাবাহিনী ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে ধানমণ্ডির ৩২ নং বাসভবন থেকে
গ্রেপ্তার
করে সেনানিবাসে নিয়ে যায় এবং এর তিন দিন পর তাকে বন্দি অবস্থায়
পাকিস্তান
নিয়ে যাওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছায় রাতে দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে। ঢাকার মগবাজার ভিএইচএফ স্টেশন থেকে প্রেরিত বার্তাটি চট্টগ্রামের সলিমপুর ভিএইচএফ স্টেশনে রিসিভ করেন টেকনিশিয়ান আব্দুল হাকিম। আব্দুল হাকিম স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তা রিসিভ করে টেলিফোনে সহকারী প্রকৌশলী গোলাম রাব্বানিকে জানান। গোলাম রাব্বানি সে বার্তা লিখে নিয়ে সাবেক মন্ত্রী একে খান সাহেবের বাসায় টেলিফোন করলে তার মেয়ে, আওয়ামী লীগ নেতা এম আর সিদ্দিকীর স্ত্রী ফোনটি রিসিভ করে বার্তাটি লিখে নেন। দুপুরে ঘোষণাপত্রটি চট্টগ্রাম বেতার থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নানের কণ্ঠে প্রচারিত হয়। ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে এম এ হান্নানের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাপত্রটি আবারও প্রচার করা হয়।
মেজর জিয়াউর রহমান দৃশ্যপটে আসার সুযোগ পান ২৭ মার্চ সন্ধ্যায়। অন্য যে কোনো সামরিক কর্মকর্তা এই বিরল সুযোগ পেতে পারতেন। মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসাররাও অংশ নিয়েছে, এটা সাধারণ মানুষকে বোঝানোর প্রয়োজন অনুভব করায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ধারেকাছে অবস্থানকারী কোনো বাঙালি অফিসারকে বেতারকেন্দ্রে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তারা প্রথম যোগাযোগ করেন ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদে চট্টগ্রামে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে প্রেষণে দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকা রফিকুল ইসলামের সাথে। ক্যাপ্টেন রফিক ২৪ মার্চ রাতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিলেন। যুদ্ধরত ছিলেন বলে ক্যাপ্টেন রফিক চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে আসতে পারেন নি। তারই পরামর্শে পটিয়া এলাকায় নিরাপদে অবস্থানকারী মেজর জিয়াউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
চট্টগ্রাম বেতারের নিজস্ব শিল্পী এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রধান উদ্যোক্তা বেলাল মোহাম্মদ ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আসেন। বেলাল মোহাম্মদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তৈরি করা বিবৃতি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তার ঘোষণার রেফারেন্সসহ পাঠ করেন জিয়াউর রহমান।
১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়। এই মুজিবনগর সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বলা বাহুল্য, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধুই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের সব সাহস আর ত্যাগের উৎস কেন্দ্র। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ তাই সমার্থক।
- আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো – কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং কিংবদন্তি বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ত্রো
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতীষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর। -ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন
- শেখ মুজিব নিহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তাঁর অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।- ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী
- আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব এবং কুসুমকোমল হৃদয় ছিল মুজিবের চরিত্রের বিশেষত্ব।- ফিলিস্তান মুক্তি মোর্চার সাবেক নেতা, নোবেল বিজয়ী ইয়াসির আরাফাত
- সহিংস ও কাপুরুষোচিতভাবে বাংলাদেশের জনগণের মাঝ থেকে এমন প্রতিভাবান ও সাহসী নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়া কী যে মর্মান্তিক ঘটনা! তারপরও বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে, তাঁরই কন্যার নেতৃত্বে। যুক্তরাষ্ট্র তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে বন্ধু ও সমর্থক হতে পেরে গর্ববোধ করে- যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি
- আওয়ামিলীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বুছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না -হেনরি কিসিঞ্জার
- বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সাহসী নেতা - প্রণব মুখার্জি।
যুদ্ধে মিত্র দেশের অবদান
১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের স্বাধিকার আন্দোলন এক সময় বিশ্ব রাজনীতিতেও বিশাল প্রভাব ফেলে। বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলো নিজ নিজ ভাবমূর্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঘটনার মূল্যায়ন করে থাকেঃ
যুদ্ধমঞ্চে বন্ধু ভারত
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে অনেকেই বলে থাকেন ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না থাকলে ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের দেশে আশ্রয় দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধে সেনা সহায়তা দেওয়াসহ সব ধরনের প্রত্যক্ষ
এবং পরোক্ষ সহায়তা দিয়েছিল ভারত। ভারতের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে স্পষ্টভাবে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। আর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পরই বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ভুটানের পর দ্বিতীয় বিদেশি রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। উপমহাদেশের অন্যতম পরাশক্তি
মে মাসের শুরু থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত এ সময়ে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করে। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এ সময়ে ভারত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যার প্রত্যাশিত সমাধানের জন্য কূটনৈতিক ও সামরিক প্রচেষ্টা জোরদার করে।
৩ থেকে ১৬ ডিসেম্বর এ সময় ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এই সহায়ক অংশগ্রহণের ফলশ্রুতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার সমর্থন
ভারতের পর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় মিত্রশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েতের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে তার প্রতিপক্ষ আমেরিকা ও চীনকে হীনবল করা সম্ভব হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে আশ্বাস দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র বা চীন যুদ্ধে সম্পৃক্ত হলে তারা এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে।
২৫ মার্চ গণহত্যার পর প্রথম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারত। দ্বিতীয়টি সোভিয়েত ইউনিয়ন।
যুক্তরাজ্যের ভূমিকা
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বন্ধুর ভূমিকা পালন করে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা জোরালোভাবে বাঙালির স্বাধীনতার লড়াইকে সমর্থন জানান। শরণার্থীদের জন্য অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দেয়। একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাক্রম সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানাতে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লন্ডনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বাঙালিদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমাবেশ হয় ১ আগস্ট ১৯৭১। গণমাধ্যম ও সে দেশের জনগণ চুপচাপ ছিল না। গণহত্যার কয়েক দিনের মধ্যেই হাউস অব কমন্স সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ২৯ মার্চ হাউস অব কমন্স সভায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ-বিষয়ক সচিব স্যার অ্যালেস ডগলাস হিউম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোয় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং পাকিস্তানকে তাদের সামরিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানান। ৫ এপ্রিল ১৯৭১ হাউস অব কমন্স সভার আলোচনায় ডগলাস হিউম ও অন্য সদস্যরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি প্রয়োগের তীব্র সমালোচনা করেন। হাউস অব কমন্স সভার সদস্যরা পাকিস্তান সরকারকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মীমাংসায় রাজনৈতিক সমঝোতাকে বেছে নিতে অনুরোধ করেন।
ব্রিটিশ সরকার ছাড়াও বেসরকারিভাবে ব্রিটিশ জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল ছিল। ব্রিটেনের ডেইলি টেলিগ্রাফ, গার্ডিয়ান, নিউ স্টেটসম্যান, টাইমস, ইকোনমিস্ট, সানডে টাইমস, অবজারভার, বিবিসিসহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যম মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যা, নির্যাতন ও বাঙালিদের দুর্দশা বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরে।
স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছর
আন্তর্জাতিক টেলিযোগযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ গ্রহণ
১৯৬৯ সালে শুরু হওয়া তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পৃক্ত করতে এবং টেলিযোগাযোগ তথ্য প্রযুক্তির বৈশ্বিক মহাসড়কে বাংলাদেশ কে সংযুক্ত করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের অংশ হিসেবে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিযোগযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ গ্রহণ করেন। বর্তমানে বিশ্বের ১৯৩ টি দেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) এর সদস্য হিসেবে অন্তভুক্ত রয়েছে।
জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে টেলিকম সেক্টরের ভূমিকা
জাতিসংঘ কর্তৃক ২০১৫ সালে সদস্য দেশসমূহের জন্য গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে টেলিকম সেক্টরের ভূমিকা অপরিসীম। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার আওতায় নির্ধারিত ১৭ টি লক্ষ্য অর্জনে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সারাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ও সুলভ প্রাপ্যতাসহ সকল শ্রেণির জনগণের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক অন্তভূক্তি নিশ্চিতকরণে টেলিকম সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ১৭৩.৩৫ মিলিয়ন মানুষ মোবাইল সেবার গ্রাহক হিসেবে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা যথা- যোগাযোগ, ইন্টারনেট সেবা, ই-লার্নিং, ই-হেলথ, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ও অন্যান্য ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র
রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৪ জুন ১৯৭৫ খ্রি: বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ উদ্বোধন করেন। জাতির জনকের দূরদৃষ্টি বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের মূল ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪টি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র রয়েছে। রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া,গাজীপুরের তালিবাবাদ, ঢাকার মহাখালী এবং সিলেট। মূল স্টেশনটি তালিবাবাদে অবস্থিত বেতবুনিয়া স্টেশনটি ব্যাকআপ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর নিয়ন্ত্রন গাজীপুরের তালিবাবাদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে করা হয়।
সাবমেরিন ক্যাবল যুগে বাংলাদেশ
মূলত সাগরের নিচের ইন্টারনেট এবং টেলিযোগাযোগ ব্যাবস্থার জন্য পুরো বিশ্বজুরে যে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাবহার করা হয় তাকেই সাবমেরিন ক্যাবল বলা হয়।২০০৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো সাবমেরিন ক্যাবল ‘এসএমডব্লিউ-৪’ এ যুক্ত হয় বাংলাদেশ, যার মাধ্যমে ২৫০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায়। কক্সবাজারের ঝিলংজাতে দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপিত হয়।এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ খাতের বিকাশে নতুন যুগের সুচনা হয়। পরবর্তীতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চালু হয়েছে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন। এ ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে সাউথইস্ট এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ (এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫) আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের সাবমেরিন কেবল থেকে সেকেন্ডে ১৫০০ গিগাবাইট (জিবি) গতির ইন্টারনেট পাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারের হার অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে আমাদের ব্যান্ডউইথের চাহিদা এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে, সি-মি-উই ৫ দিয়ে তা আর সামাল দেয়া যাচ্ছে না। প্রথম সাবমেরিন কেবল এসএমডাব্লিউ-৪ এর ২০ বছরের আয়ুষ্কাল আগামী ২০২৫ সালে শেষ হবে। তাই নিজেদের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য নতুন সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এই কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে সিঙ্গাপুরের দিকে ও কক্সবাজার হতে ফ্রান্সের দিকে ৫ টেরাবাইট করে মোট ১০ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট পাবে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ক্যাবলটির ল্যান্ডিং স্টেশন হবে কক্সবাজার। সিঙ্গাপুর হতে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত সাবমেরিন ক্যাবলটি ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূমধ্য সাগর অবধি বিস্তৃত হবে। ক্যাবলটির কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিশর ও ফ্রান্সে।
খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা
বাংলাদেশের কৃষি খাতে এক দশক ধরে একটা বিপ্লব চলেছে বলা হয়। জনসংখ্যার অত্যধিক ঘনত্ব, জমি-জন অনুপাতের অত্যল্পতা এবং চাষযোগ্য জমির ক্রমসংকোচন সত্ত্বেও বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে এখন ধান-উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের ধান উৎপাদন ছিল মাত্র ১ কোটি ১০ লাখ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা তিন গুণের বেশি বেড়ে ৩ কোটি ৬২ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। ধান, গম ও ভুট্টা মিলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ১৩ লাখ টন। ৭০ লাখ টন আলুর অভ্যন্তরীণ চাহিদার বিপরীতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ১ কোটি ৫ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। তরিতরকারি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ। তরিতরকারি এবং হাঁস-মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবু বলা যায়, কৃষি খাতে সাফল্যের ধারা প্রশংসনীয়।
কৃষি খাতে অনেকগুলো ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, যার মধ্যে উচ্চফলনশীল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার, সেচব্যবস্থার আওতায় আসায় দেশের অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষের সম্প্রসারণ, কৃষি খাতে যথাযথ ভর্তুকি প্রদান, কৃষিঋণ পদ্ধতির সহজীকরণ, ফসলের বহুধাকরণ, কৃষির লাগসই যান্ত্রিকীকরণ, উচ্চফলনশীল ফসল, তরিতরকারি, মাছ, হাঁস-মুরগি ও ফলমূল চাষের ব্যাপক প্রচলন, আধুনিক রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশকের সহজলভ্যতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসবের ফলে দেশে একটি কৃষিবিপ্লবের সূচনা হয়েছে।
জাতিসংঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নতি
জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক অবস্থা পৃথক করে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করে ।বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই শ্রেণিতে থেকে উত্তরনে বাংলাদেশের ক্রমাগত চেষ্টার ফলাফল হিসেবে ২০১৮ সালের মার্চে বাংলাদেশ প্রথববারের মত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হবার সুপারিশ পায়। পর্যবেক্ষণকাল অতিবাহিত করে গত ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) বৈঠকে বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। সাধারণত সিডিপির চূড়ান্ত সুপারিশের ৩ বছর পর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এই স্বীকৃতি জাতি হিসবে আমাদের শক্তি এবং গর্বকে প্রতিষ্ঠিত করে। বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী এ উত্তরণকে ‘ঐতিহাসিক গর্বের’ বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন; বলেছেন-এর কৃতিত্ব এ দেশের আপামর জনসাধারণের।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথম স্থানঅর্জন
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে। নিজেদের যোগ্যতা আর মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনী অচিরেই সাফল্য কুড়িয়ে আনে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী গত ৩১ আগস্ট ২০২০ খ্রিস্টাব্দ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা মোট ছয় হাজার ৭৩১ জনে উন্নীত হয়। ফলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রথম স্থান অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যুদ্ধ-পীড়িত আর দরিদ্র দেশগুলোর বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, শান্তি স্থাপন, সামাজিক উন্নতি আনয়নে বাংলাদেশ সামরিক-বেসামরিক বাহিনী সর্বোচ্চ ত্যাগ আর সাহসের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে।
পদ্মাসেতুর মত মেগা প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন
বিশ্বব্যাংকের অসহযোগিতা স্বত্বেও দক্ষিণের মানুষের জীবনমানের উন্নতি সাধন করতে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেয়। দীর্ঘ কর্মযজ্ঞ শেষে অবশেষে ডিসেম্বর ২০২০ খ্রিস্টাব্দ ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বি-স্তরের বহুমুখী সেতু দৃশ্যমান হয়। এতে বাংলাদেশের মানুষর দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণ হয়। এটি আমাদের সক্ষমতার বহিঃ প্রকাশ। একই সাথে এই সেতু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সেতুটি ব্যাপক ভুমিকা পালন করবে।
- পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় (মূল সেতুতে) ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা যা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
- দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে রয়েছে একটি একক রেলপথ।
মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা জয়
- তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আলোচনার পর মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর সালিসি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার।
- এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ জার্মানির হামবুর্গভিত্তিক সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ইটলস) মামলা দায়ের করেছিল। আর ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মামলা দায়ের হয়েছিল হেগের স্থায়ী সালিসি আদালতে।
- ভারত ও মিয়ানমার সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা দাবি করায় বাংলাদেশের সাগর এলাকা মাত্র ১৩০ নটিক্যাল মাইলে সীমিত হয়ে পড়েছিল।
- ২০১২ সালের ১৪ মার্চ ইটলসে বাংলাদেশের দাবি অনুযায়ী ন্যায্যতার ভিত্তিতে রায় দেওয়ায় ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক এলাকা এবং তদূর্ধ্ব মহীসোপান এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের সঙ্গে মামলায় হেগের আদালতেও এই সীমানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অর্জন আমাদের ভবিষ্যতের অগ্রযাত্রাকে মসৃণ করেছে। সমুদ্রসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে সহজে সামনে নিয়ে যেতে পারবে।
প্রযুক্তি খাতে স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিটক
১। সকল সরকারি স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকুরির আবেদনের অটোমেশনের জন্যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ রেখেছে টেলিটক।
সার্ভিসের নাম |
বিস্তারিত কার্যক্রম |
সময়কাল |
সুবিধাভোগী সংখ্যা |
ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়োগ কার্যক্রম |
|
২০১২-২০২০ |
সরকারী/বেসরকারী সংস্থা: ১২০ টি সংস্থার প্রায় ২৫০ টি নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে।
গ্রাহক: ১০ কোটি |
২। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অনলাইনে ফলাফল প্রকাশ করে ডিজাটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে অসামান্য অবদান রাখছে টেলিটক
সার্ভিসের নাম |
বিস্তারিত কার্যক্রম |
সময়কাল |
সুবিধাভোগী সংখ্যা |
পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ |
পিএসসি,জেএসসি,এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল পাচ্ছেন-
|
২০১১-২০২০ |
পিএসসি- ১.৫ কোটি জেএসসি- ৫ কোটি এসএসসি – ৬ কোটি এইচএসসি –- ৬ কোটি স্নাতক - ৩.৫ কোটি
|
স্কুল ও কলেজ ভর্তি কার্যক্রম |
|
২০১৪-২০২০ |
স্কুল ও কলেজ- ৩৬,০০০ টি কলেজ - ৪০০ টি স্কুল - ৩৪০ টি বিশ্ববিদ্যালয়- ৩৪ টি ৭০টি মেডিকেল কলেজ, ৫০০টি ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য সংস্থা। ছাত্র-ছাত্রী - ০৩ কোটি। |
৩। টেলিটক শুধু একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিই নয়, দেশে সর্বনিম্ন মূল্যে ডাটা প্যাক ও ভয়েস কলরেট সুবিধা প্রদান করার মাধ্যমে টেলিটক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে-
বিষয় |
টেলিটিক |
জিপি |
রবি |
বাংলালিংক |
ডাটা ১ জিবি (৭ দিন) |
২৭ টাকা |
৭৭ টাকা |
১০১ টাকা |
৪২ টাকা |
৪। টেলিটক মুনাফা অর্জন নয় বরং কাজ করে যাচ্ছে দেশের মানুষের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো সুন্দর করে তুলতে। তারই ধারাবাহিকতার সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে পৌছে গিয়েছে টেলিটকের নেটওয়ার্ক।
তিনটি পার্বত্য জেলাসহ সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য টেলিটক প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করছে। তিন পার্বত্য জেলায় এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৮৩ টি 2G বিটিএস, ১৭৪ টি 3G নোড-বি এবং ৪৮ টি 4G ইনোড-বি স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য এলাকায় অধিকাংশ গ্রাহক টেলিটকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে, যা পার্বত্য অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সুন্দরবনে একমাত্র টেলিটকের নেটওয়ার্ক চালু রয়েছে। তাছাড়া সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় এ যাবৎ সর্বমোট ৯৮টি 3G নোড-বি এবং ১৬৫ টি 2.5G বিটিএস স্থাপন করা হয়েছে।
৫। দেশের বাকিসব অপারেটরদের মত মুনফার মুখাপেক্ষী না হয়ে দেশের হাওর বাওর অঞ্চলে টেলিটক তার হাওর বাওর প্রজেক্টের মাধ্যমে পৌছে দিয়েছে তাদের ৩জি/৪জি নেটওয়ার্ক।
“হাওর, দ্বীপ, জলাভূমি, বিল এবং ছিটমহল এলাকার জনগণকে তথ্যপ্রযুক্তির হাইওয়েতে সংযুক্ত করার মাধ্যমে গ্রাম ও শহর এলাকার মানুষের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণের জন্য বিটিআরসি এর সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থায়নে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক “হাওর ও দ্বীপাঞ্চলে উচ্চ গতির মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন” প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বর্ণিত এলাকাসমূহে সর্বমোট ৪০০টি নতুন 4G মোবাইল বিটিএস সাইট স্থাপন এবং ৪২টি বিদ্যমান মোবাইল বিটিএস সাইট আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২০৫টি 4G মোবাইল বিটিএস সাইটের সকল কাজ সম্পন্ন করে নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে এবং সাইটসমূহের কাজ আগামী আগষ্ট, ২০২১ এর মধ্যে সমাপ্ত হবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও সিলেট এর হাওর অঞ্চল, হাতিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপাঞ্চল, উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বিল এলাকা এবং ছিটমহলসমূহ এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত।
৬। নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে টেলিটক নারীদের জন্যে স্পেশাল প্যাক অপরাজিতা চালু করে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তিপ্রাপ্ত মায়েদের জন্যে টেলিটক দিচ্ছে বিনামূল্যে মায়ের হাসি সংযোগ।
এক নজরে অপরাজিতা |
||
১ |
বিশেষ সুবিধা |
-৯৯ টি এফএনএফ। - এসএমএসঃ ৩০ পয়সা/যেকোন অপারেটরে |
২ |
কলরেট |
৪৭ পয়সা/মিনিট যেকোন লোকাল নাম্বারে ২৪ ঘন্টাই |
৩ |
ডাটা |
১জিবি-৮টাকা(প্রথম তিন মাস) |
এক নজরে মায়ের হাসি |
||
১ |
বিশেষ সুবিধা |
-স্টার্ট-আপ বোনাসঃ ২৯ টাকা রিচার্জে ৬০মিনিট, ১ জিবি ডাটা, মেয়াদ ১৫ দিন -১ সেকেন্ড পালস -১০ টি এফএনএফ |
২ |
কলরেট |
৪৭ পয়সা/ মিনিট |
৭। এখন থেকে আদালতে যথাসময়ে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সমন জারি পদ্ধতির পাশাপাশি সাক্ষীর মোবাইলে SMS-এর মাধ্যমে ফৌজদারি মামলার তারিখ জানাবে সরকারি মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটক।
গত ৯ মার্চ,২০২০ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এবং টেলিটক-এর মধ্যে এ সম্পর্কিত চুক্তি সম্পাদিত হয় ।